Digital এবং Aneroid Sphygmomanometer এর মধ্যে পার্থক্য কী? ভূমিকা
রক্তচাপ বা Blood Pressure মাপা চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হলো বিশ্বের সবচেয়ে প্রচলিত স্বাস্থ্য সমস্যা, যা হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং কিডনি রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। তাই রক্তচাপ সঠিকভাবে মাপা অত্যন্ত জরুরি।
রক্তচাপ মাপার জন্য যে যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয় সেটির নাম হলো Sphygmomanometer। এর দুটি প্রচলিত ধরন হলো:
এখন প্রশ্ন হলো—Digital এবং Aneroid Sphygmomanometer এর মধ্যে আসল পার্থক্য কী? কোনটা বেশি নির্ভরযোগ্য এবং কোন পরিস্থিতিতে কোনটা ব্যবহার করা উচিত? এই ব্লগে আমরা সেই প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর জানবো।
Sphygmomanometer কী?
Sphygmomanometer হলো এমন একটি চিকিৎসা যন্ত্র যা রক্তচাপ মাপতে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত এটি তিনটি অংশ নিয়ে তৈরি:
১. Inflatable Cuff – রোগীর হাতে বাঁধা হয়।
২. Manometer – চাপ মাপার জন্য ব্যবহৃত হয়।
৩. Inflation Device (Bulb বা Pump) – কফ-এ বাতাস ভরতে সাহায্য করে।
রক্তচাপ মাপা হয় mmHg (millimeter of mercury) এককে।
রক্তচাপ পরিমাপের ইতিহাস
-
প্রথমবার রক্তচাপ মাপা হয় ১৮শ শতাব্দীতে।
-
১৮৯৬ সালে ইতালিয়ান ডাক্তার Scipione Riva-Rocci প্রথম Mercury Sphygmomanometer তৈরি করেন।
-
পরে Aneroid (Mercury ছাড়া) মডেল আসে।
-
আধুনিক যুগে Digital Sphygmomanometer সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে।
Aneroid Sphygmomanometer
সংজ্ঞা
Aneroid Sphygmomanometer হলো একটি মেকানিক্যাল ডিভাইস যা মার্কারি ছাড়া (Mercury-free) রক্তচাপ মাপে।
কাঠামো
-
Inflatable Cuff
-
Manual Inflation Bulb
-
Aneroid Dial Gauge (Clock-like dial)
-
Stethoscope (আলাদাভাবে দরকার হয়)
ব্যবহার
-
কফ রোগীর হাতে পরানো হয়।
-
পাম্প দিয়ে কফ-এ বাতাস ভরা হয়।
-
স্টেথোস্কোপ ব্যবহার করে Korotkoff sound শোনা হয়।
-
Dial Gauge-এ রিডিং দেখা হয়।
সুবিধা
-
মার্কারি ব্যবহার হয় না (পরিবেশবান্ধব)।
-
তুলনামূলকভাবে সস্তা।
-
দীর্ঘস্থায়ী।
-
ডাক্তারদের কাছে নির্ভরযোগ্য।
অসুবিধা
-
ব্যবহার শিখতে হয় (টেকনিক্যাল দক্ষতা প্রয়োজন)।
-
নিয়মিত ক্যালিব্রেশন না করলে ভুল দেখাতে পারে।
-
রোগী নিজে মাপতে অসুবিধা হয়।
Digital Sphygmomanometer
সংজ্ঞা
Digital Sphygmomanometer হলো একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে রক্তচাপ মাপে।
কাঠামো
-
Inflatable Cuff (হাত বা কব্জির জন্য আলাদা মডেল)
-
Electric Pump & Sensor
-
Digital Display Screen
ব্যবহার
-
কফ রোগীর হাতে পরাতে হয়।
-
একটি বাটন চাপলেই মেশিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতাস ভরে।
-
সেন্সরের মাধ্যমে সিস্টোলিক, ডায়াস্টোলিক ও পালস রেট দেখায়।
সুবিধা
-
ব্যবহার সহজ (শিশু ও বয়স্ক সবাই করতে পারে)।
-
কোনো টেকনিক্যাল দক্ষতা লাগে না।
-
দ্রুত রিডিং পাওয়া যায়।
-
পালস রেটও দেখায়।
অসুবিধা
-
দাম বেশি।
-
মাঝে মাঝে ত্রুটি বা কম সঠিকতা।
-
ব্যাটারি বা চার্জের ওপর নির্ভরশীল।
Digital বনাম Aneroid: মূল পার্থক্য
বৈশিষ্ট্য | Aneroid Sphygmomanometer | Digital Sphygmomanometer |
---|---|---|
অপারেশন | ম্যানুয়াল, ডাক্তারদের জন্য | অটোমেটিক, রোগীর জন্য সহজ |
সঠিকতা | বেশি নির্ভুল (সঠিকভাবে ক্যালিব্রেটেড হলে) | কিছুটা ভ্যারিয়েশন হতে পারে |
ব্যবহারকারীর দক্ষতা | টেকনিক্যাল স্কিল দরকার | খুব সহজ, এক বাটনে রিডিং |
স্টেথোস্কোপ প্রয়োজন | হ্যাঁ | না |
দাম | কম (২,৫০০–৫,০০০ টাকা) | বেশি (৩,৫০০–১০,০০০ টাকা) |
রক্ষণাবেক্ষণ | নিয়মিত ক্যালিব্রেশন দরকার | ব্যাটারি/চার্জ দরকার |
উপযোগিতা | ডাক্তার, হাসপাতাল, ক্লিনিক | বাড়িতে ব্যক্তিগত ব্যবহার |
কোনটা কার জন্য উপযুক্ত?
-
ডাক্তার ও হাসপাতালের জন্য: Aneroid Sphygmomanometer (কারণ বেশি সঠিক এবং ক্লিনিকাল ব্যবহারের জন্য ভালো)।
-
ব্যক্তিগত/ঘরোয়া ব্যবহারের জন্য: Digital Sphygmomanometer (কারণ সহজে ব্যবহারযোগ্য, বিশেষত বয়স্ক রোগীদের জন্য)।
দাম ও প্রাপ্যতা (বাংলাদেশে)
-
Aneroid Sphygmomanometer: ২৫০০ – ৫০০০ টাকা
-
Digital Sphygmomanometer: ৩৫০০ – ১০,০০০ টাকা
(Omron, Rossmax, Microlife, Beurer ব্র্যান্ড বাংলাদেশে জনপ্রিয়)
ডাক্তার ও রোগীদের অভিজ্ঞতা
-
ডাক্তাররা সাধারণত Aneroid ব্যবহার করেন কারণ এটি ক্লিনিক্যালি বেশি নির্ভুল।
-
রোগীরা Digital পছন্দ করেন কারণ এটি সহজ এবং সময় বাঁচায়।
কেনার সময় সতর্কতা
-
সবসময় অরিজিনাল ব্র্যান্ডেড মেশিন কিনতে হবে।
-
ওয়ারেন্টি ও সার্ভিস সাপোর্ট আছে কিনা দেখতে হবে।
-
Aneroid কিনলে নিয়মিত ক্যালিব্রেশন করতে হবে।
-
Digital কিনলে ভালো ব্র্যান্ড নির্বাচন করতে হবে (Omron, Rossmax ইত্যাদি)।
উপসংহার
Digital এবং Aneroid Sphygmomanometer – দুটোই কার্যকর কিন্তু ভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার হয়।
-
ডাক্তার ও ক্লিনিকের জন্য: Aneroid সবচেয়ে ভালো।
-
বাড়িতে নিয়মিত ব্যবহারের জন্য: Digital সবচেয়ে উপযুক্ত।
অবশেষে, যেকোনো যন্ত্রই হোক না কেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা এবং নিয়মিত রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ করা, যাতে সময়মতো রোগ ধরা যায় এবং চিকিৎসা নেওয়া যায়।
Comments
Post a Comment